: তারপর?
: তারপর দোয়েল পাখিটা উড়তে উড়তে চলে গেছে নীলপরীর দেশে। গিয়ে দেখে নীলপরী রানীর কাপড়ে নীল দিচ্ছে আর ফুলের সুবাস মাখাচ্ছে।
: তারপর?
: এদিকে হয়েছে কি লালপরীতো নীলপরীকে দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু পোলাও মাংস কোপ্তা কাবাব সর্ষে ইলিশ রান্না করবে কিভাবে! সব জিনিসের যা দাম!
: তারপর?
: তখন সাদা প্রজাপতি বলল, ‘শুটকি মাছের ঝাল ভর্তা বানাও, আলুর দম রান্না কর, আম ডাল হলে বেশ হয়, সাথে কাচা মরিচ আর পেয়াজ কুচি তো আছেই। রোজ রোজ মধু খেতে একটুও ভালো লাগে না।’
: তারপর?
: এই না শুনে রাজা বললেন -খাবে তো খাও বেগুন ভাজা আর কাঁচকলা। বেগুন ভাজার কথা শুনে রাণীমা মন খারাপ করলেন। উনার আবার বেগুনে এলার্জি। খুব চুলকানি হয়। কাঁচকলা খেতে হবে বলে রাজপুত্র কান্না শুরু করে দিল। কান্নার ভ্যা ভ্যা শব্দে মন্ত্রীর মুখের লেবেঞ্চুস ধপাস করে মাটিতে পরে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। তাই না দেখে সেনাপতি খুকখুক করে হেসে দিলেন।
: তারপর?
: রাজা বললেন, ‘তাই’তো বলি মন্ত্রীর দাঁতে পোকা কেনো! সেনাপতি, তুমি এক্ষুণি মন্ত্রীর দাতের পোকাগুলোর মাথা কেটে ফেল।’
: তারপর?
: সেনাপতি বলল -মন্ত্রীর মুখে গন্ধ। সামনেই যাওয়া যায় না। লেবেঞ্চুস খেয়ে তিনি দাঁত মাজেন না। তাই শুনে রাজা বললেন, ‘তবে আগে নিজের নাক কাটো। তারপর মন্ত্রীর মুখের পোকার মাথা কাটতে হবেই হবে।’
: তারপর?
: দোয়েল বলল, ‘সবাই দেখি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। টোনা আর টুনি মজা করে পিঠা খাচ্ছে। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বিয়ে করবে বলে দৈত্য মারতে যাচ্ছে। রাজা আর তার লোকেরা কাটাকাটি করছে, রাজ্যের প্রজাদের লুটপুটে খাচ্ছে, অত্যাচার করছে। দুয়োরাণী বিউটি পারলারে ফেসিয়াল করছে, সুয়োরানী হার্বাল উপটান মাখছে। বাঘের গলায় হাড় ফুঁটলে বক তা বের করে দিচ্ছে। কিন্তু আমার যে বেশী করে কিশমিশ দেয়া পায়েস খেতে খুব ইচ্ছে করছে সেটা নিয়ে কারো একটুও চিন্তা নেই। আমি কি তোমাদের কেউ নই! আমি কি তোমাদের কিছুই হই না!’
: তারপর?
: এদিকে ছাতা হারিয়ে ব্যাংয়ের মন ভালো নেই। বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি লেগেছে। দোয়েলের কথা শুনে সে বলল, ‘ তেপান্তরের মাঠ পেরুলে দুধের সাগর। সেই সাগর পেরুলে মাখনের পাহাড়। নরম নরম মাখনের পাহাড় পার হলে তবেই রূপকথার দেশ। সে রূপকথার দেশেই পোলাও পাওয়া যায়, কোর্মা কোপ্তা পাওয়া যায়, ইলিশ ভাজা আর রুই মাছ ভুনা পাওয়া যায়। পায়েস পাওয়া যায়। ব্যাংয়ের হারানো সিল্কের ছাতাও পাওয়া যায়, ব্যাংয়ের সর্দির ওষুধও পাওয়া যায়।’
: তারপর?
: দোয়েল বলল – আমি যাব রূপকথার দেশে। পায়েস খাবো। লালপরী নীলপরীর জন্য পোলাও কোর্মা আনবো, ব্যাংয়ের জন্য সিল্কের ছাতা আর সর্দির ওষুধও আনবো।
: তারপর?
: জলদস্যু বলে ‘তবে এই নাও রূপকথার দেশে যাবার মানচিত্র, কাঠের জাহাজ আর দূরবীন।’ দোয়েল পাখি মানচিত্র খুলে দূরবীনে চোখ লাগাতেই আম্মু ডাকতে শুরু করেন, বলেন ‘তাড়াতাড়ি উঠো। সেই কখন সকাল হয়েছে। কাজে যেতে হবে। উঠো.., উঠো..।’
: তারপর?
: তারপর দোয়েল পাখিটা সকাল সকাল কাজে যায়। হোটেল ঝাড়ু দেয়, বেঞ্চ আর টেবিলগুলো মুছে। জগে পানি ভরে। নাস্তা করতে আসা লোকগুলোর টেবিলে টেবিলে পরোটা আর সাথে ভাজি, হালুয়া বা ডিম ভাজা দেয়।
: তারপর?
: আম্মুর মত এই লোকগুলোও বুঝতে পারে না দোয়েলের মন প্রতিটা মুহূর্তে রূপকথার দেশে যাবার জন্য ভীষণ ছটফট করে। টেবিলে বিছানো প্লাস্টিকের কভারকে তার মনে হয় রূপকথার দেশে যাবার মানচিত্র, বেঞ্চকে জাহাজ আর গ্লাসগুলোকে দূরবীন।
loading...
loading...
যাপিত জীবনের অসাধারণ অণুগল্প উপহার।
loading...
নান্দনিক কাব্যকথায় চমৎকার গল্প,খুব ভালো লাগলো।
loading...
অন্যের লিখায় পাঠক না হওয়া অথবা নিজের লিখায় মন্তব্যের উত্তর না দিলে আমার মনে হয় পাঠক সংখ্যা কমে যায়।
শুভ সকাল মি. আবু সাঈদ আহমেদ।
loading...